
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল পদে অবস্থান করে বিভিন্ন বে-আইনী ও অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে বরিশাল সিটি মেয়রসহ ৩ জনকে আইনী নোটিশ দেয়া হয়েছে। গতকাল ২ জানুয়ারী রবিবার কর্পোরেশনের নির্বাচিত ৭ জন কাউন্সিলর যৌথভাবে এ ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে লিখিত জবাব প্রেরণের অনুরোধ জানিয়ে আইনজীবী আজাদ রহমানের মাধ্যমে এ নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশটি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
নোটিশ দাতা হলেন ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিল হুমায়ুন কবির, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান, ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমির হোসেন বিশ্বাস, ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ মোঃ আনিছুর রহমান (আনিছ শরীফ) ও ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার। এছাড়া নোটিশ গ্রহীতা অন্য দুʼজন হলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব।
নোটিশ দাতাদের পক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, ২০১৮ সনের অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে নিজ নিজ দায়িত্বে আছেন। কিন্তু সিটি মেয়রসহ অন্যান্যরা
কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল পদে থাকে বিভিন্ন বে-আইনী ও অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত আছেন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সকল কাউন্সিলরদের সেপ্টেম্বর/২০২১ মাস পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা হারে সম্মানী ভাতা ও অন্যান্য ভাতা প্রদান করা হয়। এছাড়া অক্টোবর/নভেম্বর মাসে সম্মানী ভাতা ও অন্যান্য ভাতা ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু আপনারা নোটিশ গ্রহীতাগণ অন্যান্য কাউন্সিলরদের অক্টোবর/২০২১ ও নভেম্বর/২০২১ মাসের সম্মানী ভাতা ও অন্যান্য ভাতা ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
এবং ডিসেম্বর/২০২১ মাসে ও অন্যান্য ভাতা ৫০ হাজার টাকা প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু নোটিশ দাতাদের ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা অক্টোবর/২০২১ ও নভেম্বর/২০২১ মাসে প্রদান করেন। যা পরবর্তীতে একই হারে প্রদান করার কার্যক্রম অব্যহত আছে।
আপনারা নোটিশ গ্রহীতাগণ একই আইনের অধীন দায়িত্বে থাকিলেও নোটিশ দাতাদের সহিত এক রকম আচরণ করছেন না এবং অন্যান্য কাউন্সিলরদের সহিত ভিন্নরূপ আচরণ করছেন। যা আইনগত গ্রহণযোগ্য নয়। আপনারা নোটিশ গ্রহীতাদের সংগত ছিল নোটিশ গ্রহীতাগণ সহ সকল কাউন্সিলসের অক্টোবর/২০২১ ও নভেম্বর/২০২১ মাস হইতে ৫০ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা ও অন্যান্য ভাতা প্রদান করা। কিন্তু কর্পোরেশনের ১ম সভায় কাউন্সিলরদের সিটি কর্পোরেশনে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। অথচ জনগণের স্বার্থে নোটিশ দাতাদের বিভিন্ন কাজে সিটি কর্পোরেশনে যাওয়া এবং সেখানে জনগণের জন্য কাজ করা আবশ্যকীয় কর্তব্য বটে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে এবং নোটিশ দাতাদের রেজুলেশনে স্বাক্ষর ব্যতিরেকে জনস্বার্থ উপেক্ষা করিয়া হোল্ডিং ট্যাক্স কোন কোন ক্ষেত্রে ১০০০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে নোটিশ দাতাদের ওয়ার্ডের জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে নোটিশ দাতাদের বিভিন্ন সময় জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়।
একই সাথে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের স্থায়ী বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বে-আইনীভাবে ওএসডি রেখেআপনারা নোটিশ গ্রহীতাগণ মাস্টার রোলে অদক্ষ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করে বে-আইনীভাবে সিটি কর্পোরেশনের কাজ পরিচালনা করে আসছেন।
অথচ মাস্টার রোলে কর্মচারীদের দ্বারা এভাবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার কোন সুযোগ নাই। মাস্টার রোলের কর্মচারীদের আইনগত কোন দায়বন্ধতা না থাকায় সংগত কারণেই তাদের দিয়ে নোটিশ দাতা ও জনগণের অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হইতে পারে। নোটিশ দাতাগণ আপনারা নোটিশ গ্রহীতাদের এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন আইন) ২০০৯ এবং সংশ্লিষ্ট বিধি, প্রজ্ঞাপন, সরকারী আদেশ নির্দেশ অনুসারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া সংগত। কিন্তু আপনারা নোটিশ গ্রহীতাগণ আইন, বিধি, সরকারী নিয়মকানুন, প্রজ্ঞাপন মোতাবেক বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম পরিচালনা না করে খামখেয়ালীপনাভাবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
যার ফলে কর্পোরেশনের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়াছে এবং জনঅসন্তোষ দিন দিন বৃদ্ধি পাইতেছে। এছাড়া কর্পোরেশনের আওতাধীন হাট-বাজার সমূহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি মোতাবেক টেন্ডারের মাধ্যমে টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন না করে এক শ্রেণীর ব্যক্তিদের স্বার্থ রক্ষা করে আপনারা হাট বাজার সমূহ নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে দীর্ঘদিন যাবৎ ইজারা প্রদান করে আসছেন। বে-আইনীভাবে নিযুক্তিয় ইজারাদারদের অত্যাচারে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে নোটিশ দাতাদের এ বিষয়ে স্থানীয় জনগণের কাছে প্রতিনিয়ত জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে। একই সাথে আপনারা নোটিশ গ্রহীতাদের অত্র নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে উল্লেখিত বিষয়ে লিখিত জবার প্রেরণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণের ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে আপনারা নোটিশ গ্রহীতাগণ কোন জবাব প্রেরণ না করলে নোটিশ দাতাগণ ধরে নিবেন যে, এ বিষয়ে আপনাদের কোন বক্তব্য নাই। যার কারণে নোটিশ দাতাগণ উপযুক্ত আদালতে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করিতে বাধ্য হবেন। নোটিশের অনুলিপি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব বাংলাদেশ সচিবালয়, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, স্থানীয় সরকার, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পরিচালক, বরিশাল জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, জনতা ব্যাংক লিমিটেড বরিশাল কর্পোরেট শাখার ব্যবস্থাপক ও জনতা ব্যাংক লিমিটেড বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের মহা-ব্যবস্থাপক।