নির্বাচন কমিশন নয়, এটা জাতীয় চোর কমিশন: সোহেল

Monday, January 3rd, 2022

ঢাকা: বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আবারো যদি অতীতের মতো ভোট চুরির ফন্দি করেন তবে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে খুলনায় ছাত্রদলের এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। ছাত্রদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করে খুলনা ও জেলা মহানগর ছাত্রদল। সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। খুলনা কেডি ঘোষ রোডের সামনে বিএনপির অফিসের সামনে এই সমাবেশ হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, দেশে এখন কোনো ভোট হয়না। এখন রাতেই ভোট হয়। ডাকাতেরা জনগণের ভোটাধিকার চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন তারা মরা মানুষের ভোটও দিয়ে দেয়। রাষ্ট্রপতি এখন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংলাপ করছেন। আবার বলছেন তার হাতে ক্ষমতা সীমিত। আসলে তার কোনো ক্ষমতাই নেই। তার সংলাপ কোনো সংলাপ না। এবার সংলাপ হচ্ছে কাকে দিয়ে নতুনভাবে কিভাবে ভোট চুরি করা যায়। আসলে নির্বাচন কমিশন কোনো কমিশন নয়। এটা জাতীয় চোর কমিশন।

তিনি বলেন, ৭ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এগুলো তো শুধু কান। এখন কান টানলে মাথা এমনিতেই আসবে। সোহেল বলেন, আজকে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। যিনি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী। তিনি তো রাজনীতি না করলেও পারতেন। কিন্তু দেশের মানুষ ও দেশের প্রয়োজনে স্বামীর শাহাদাতের পর বিএনপির হাল ধরেন।

এরপরই শুরু হয় বেগম খালেদা জিয়ার লড়াই। স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছেন। আজ সেই নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছে। তাকে শত বছরের পুরনো পরিত্যক্ত একটি কারাগারে রেখেছিলেন। সেখানেই তাকে পয়জনিং করা হয়েছে। এখন তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এখন দেশনেত্রীর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আসলে সেটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের রক্তক্ষরণ।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি নাকি বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি মহানুভবতা দেখিয়েছেন। অথচ ফরিদপুরের একজন ছাত্রলীগের নেতার কাছে ২ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যায়। আর আপনি দুর্নীতির মহাসমুদ্রে দাঁড়িয়ে ২ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে আটকে রেখেছেন। খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার চান। তিনি কোনো অনুকম্পা চান না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৯৮৬ সালে শত শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি করে আজকের প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার এরশাদের পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তারা তো কথা দিয়ে কথা রাখেনি। অন্যদিকে সেসময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের সাথে কখনো আপোস করেননি।

ছাত্রদলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এবার কুসুম কুসুম আন্দোলনে নামলে হবে না। নামতে হবে নামার মতো করে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসা দেয়ার দাবিতে এবং দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। এই আন্দোলনে সামনে থেকে ছাত্রদলকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। সমুদ্রে যেমন সাইক্লোন হয় তেমনি রাজপথেও সাইক্লোন তুলতে হবে। বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে।

অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, দেশের অসংখ্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রদল। আজকে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। তাই আবারো ছাত্রদলকে জেগে ওঠে রাজপথে নামতে হবে। আমাদেরকে আর ঘরে বসে থাকলে চলবেনা। এখনই সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে মাঠে নামতে হবে।

ছাত্রসমাবেশ উপলক্ষে খুলনা বিভাগের যশোর, সাতক্ষীরা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। এরআগে ঢাকা থেকে যশোর পৌঁছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক মন্ত্রী মরহুম তরিকুল ইসলামের কবর জিয়ারত করেন।

খুলনা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি এম এ মান্নান মিস্ত্রীর সভাপতিত্বে ও মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ এবং খুলনা জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা তুহিনের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আকরামুল হাসান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান, ফখরুল আলম, কাজী রাশেদ প্রমুখ।

এসময় খুলনা-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি পার্থদেব মণ্ডল, ওমর ফারুক কাওছার, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, তানজিল হাসান, তবিবুর রহমান সাগর সহ খুলনা জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।