
নিজস্ব প্রতিবেদক : অবৈধভাবে’ ২১ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বরিশাল অফিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সম্প্রতি দুদকের সমন্বিত বরিশাল জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক এদীপ বিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন কমিশনের উপ পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক।
মামলায় নজরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করার পাশাপাশি তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন ও নজরুল ইসলামের ভাই মো. তরিকুল ইসলামকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে হিসাব খুলে টাকা জমা রাখা এবং বরিশাল সদরে এই প্রকৌশলীর নিজের নামে একটি বাড়ি এবং স্ত্রীর নামে বরিশাল সদরে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ জমির তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, আসামি নজরুল ইসলাম ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বরিশাল শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। ২০২০ সালের ৫ জুলাই পর্যন্ত তিন বছরে এ হিসাবে চার কোটি ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা জমা হয়। এর মধ্যে তিনি চার কোটি ৯৪ লাখ নয় হাজার টাকা উত্তোলনও করেন।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নজরুল ইসলামের ভাই তরিকুল ইসলামের নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বরিশাল শাখায় আরো একটি হিসাব খোলা হয়।
এ হিসাবেও ২০২০ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত ছয় কোটি এক লাখ টাকা লেনদেন হয়। এছাড়া একই ব্যাংকের বরিশাল শাখায় নজরুল ইসলামের এফডিআর হিসাবে জমা করা ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া যায় বলে এজাহারে বলা হয়।
অন্যদিকে তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের নামে ২০১৯ সালের ৩০ মে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বরিশাল শাখায় এক বছর মেয়াদি ৭৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া যায় উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়, এ অর্থ ২০২০ সালের মে মাসে উত্তোলন করা হয়।
এছাড়া ওই ব্যাংকে শাহনাজ পারভীনের নামে এফডিআরসহ পাঁচটি হিসাব পাওয়া গেছে।
অপরদিকে বরিশালের পূবালী ব্যাংক শাখায় ২০১৮ সালে উপ সহকারী প্রকৌশলী নজরুল আরও একটি হিসাব খোলেন। এতে ১০ লাখ টাকা জমা করে তার ভাইয়ের মাধ্যমে উত্তোলন করান। পাশাপাশি আইডিএলসি ফাইন্যান্সে নজরুল ইসলামের নামে ছয়টি এফডিআর এবং ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৫ বছর মেয়াদি ৮৬ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা তিনি পরিশোধ করে দেন।
এভাবে নজরুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও ভাইয়ের ব্যাংক হিসাবে মোট ২১ কোটি এক লাখ টাকা জমা ও উত্তোলনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, এসব অর্থের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর ৪ (২) ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
তার গ্রামবাসীর সূত্রে জানা যায়, তিনি বিভিন্ন নামে বেনামে ও আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমেও বিভিন্ন কৌশলে অর্থশত কোটি টাকা রেখেছেন। যা তার আত্মীয় স্বজনের একাউন্ট তলব করলেই বের হয়ে আসবে।
সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান না করে অর্থের আড়ালে অনেক অবৈধ সম্পদ গড়েছেন বলেও জানা যায়।
এদিকে সরকার দেশে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলে ওই সুযোগে সামান্য একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তিনি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছেন। তিনি প্রায় দুই দুই কোটি ২০ লাখ টাকা সাদা করেছেন।
উল্লেখ্য, আয়কর আইনের ১৯-এর এএএএএ ধারার বিশেষ সুযোগ নিয়ে ২০২০ সালে নগদ টাকা সাদা করেছেন তিনি। ওই ধারায় একজন করদাতা নগদ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকার ১০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ পান।পর্ব-১