আমতলী-তালতলীর এমপি শম্ভু ও ওসির ফোনালাপ ফাঁস

Saturday, January 8th, 2022

বরগুনা: বুধবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে এই অডিও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বিয়ষটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম তারিকুল ইসলামের কথোপকথনের একডি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে এই অডিও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বিয়ষটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

প্রাইম নিউজের হাতে এসেছে ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ওই ফোনালাপ। ওসি তারিকুল ইসলাম জেলা যুবলীগের একজন শীর্ষ নেতাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় এমপি শম্ভু ফোন করে বিষয়টি জানতে চান। এই কথোপকথনে সাংসদের ভাষায় প্রচ্ছন্নভাবে এক ধরনের চাপ প্রয়োগের ইঙ্গিত ছিল।

ওসি তারিকুল ওই রেকর্ডের কথোপকথনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে ফোনালাপটি কিভাবে ফাঁস হয়েছে এ সম্পর্কে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

সংসদ সদস্য ও ওসি তারিকুলের কথোপকপন তুলে ধরা হলো

সংসদ সদস্য: ওসি সাহেব।

ওসি: জি স্যার আসসালামু আলাইকুম।

সংসদ সদস্য: আপনার পরবর্তীতে দারোগা কি (ওসি পদটি দারোগা নয়, পরিদর্শক) বরগুনায় আসছে?

ওসি: পরবর্তী?

সংসদ সদস্য: আপনি জানেন না, আপনি যখন চলে যাবেন, তখন যে আসবে সে কি আসছে বরগুনায়?

ওসি: স্যার

সংসদ সদস্য: প্রশ্নটা অনেক কড়া, না?

ওসি: অনেক কঠিন, কড়া স্যার। স্যার, আমি তো আপনাদের রেখে যেতে চাই না।

সংসদ সদস্য: ঠিক আছে। আচ্ছা আপনি কোথাও বলেছেন সাবু (সাহাবুদ্দিন সাবু, জেলা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী) যুবলীগে আপনার প্রার্থী?

ওসি: না স্যার।

সংসদ সদস্য: এই কথা আপনি কারও সাথে বলছেন?

ওসি: আমার প্রার্থী হয় কীভাবে, আমি কি রাজনীতি করি?

সংসদ সদস্য: আমি কিন্তু বিশ্বাস করি না বলছেন। বলছেন কি না, চিন্তা করেন।

ওসি: না স্যার।

সংসদ সদস্য: মেশেন তো সবার সাথে, কোন গুণ্ডার ধারে বসে কী কইছেন কে জানে।

ওসি: স্যার এটা ফালতু কথা, ফালতু কথা আমি বলতে পারি না।

সংসদ সদস্য: এটা আপনি পারেন না, এসপি সাহেব কইতে পারে?

ওসি: না স্যার সে-ও বলতে পারে না, আপনারা বলতে পারেন।

সংসদ সদস্য: বোঝেন না এলাকায় কত কথাই না হয়।

ওসি: এটা কোনো কথা স্যার? আমরা বলব কেন, এক সময় আমরা ছাত্রলীগ করেছি ঠিক আছে। এখন তো বলার কোনো স্কোপ (সুযোগ) নাই। আজ তো স্যার বিএনপিকেও প্রোগ্রাম করতে দিলাম।

সংসদ সদস্য: তারপর, করবে না কেন? ভদ্র আচরণ করলেই হয়, অভদ্র আচরণ করলেই পিটান। অভদ্র, মারমুখী হইলে তখন আমরা পুলিশকেও জিজ্ঞেস করব না, তখন আমাদের পোলাপান পিটাইবে। বইলা দিয়েন আপনারা (বিএনপি) করলে ভদ্রভাবে কইরেন।

ওসি: জি স্যার, তারা ভদ্রভাবেই করছে।

সংসদ সদস্য: ৬ নম্বরে (বুড়িরচর ইউনিয়ন) ইউনিয়ন ইলেকশনের সময় যে মামলাগুলা হইছিল, সেগুলা কী অবস্থায় আছে?

ওসি: স্যার ওগুলা কি পেন্ডিং আছে।

সংসদ সদস্য: হ্যাঁ পেন্ডিং আছে না। রিপোর্ট তো দেন নাই এখনো। যাওয়ার আগে ওগুলা গুছাইয়্যা দিয়া যাইয়েন।
ওসি: দিমু স্যার।

সংসদ সদস্য: আবার তাইলে আমরা অ্যাডিশনাল, এএসপি কইর‌্যা নিয়া আসমু।

ওসি: না স্যার দরকার নাই, এই র‌্যাঙ্কেই যেন বাড়ি যাইতে পারি।

এ সময় সংসদ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, অনেকে এএসপি হইতে চায় না, ওসিই থাকতে চায়।

কথোপকথনের বিষয়ে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে একাধিকবার তার মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ওসি তারিকুল ইসলামের শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘রেকর্ডটি আমিও শুনেছি। আমার কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। এটা আমারই কণ্ঠ। গত ২ ডিসেম্বর এমপি স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এমন কথা তিনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তবে এটা কীভাবে ফাঁস হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি না।’

বরগুনা জেলা যুবলীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ‘কথোপকথন আমি শুনেছি। এমপি মহোদয় মুরুব্বী মানুষ, কি কারণে ওসিকে তিনি আমার কথা বলেছেন আমি বুঝতে পারছিনা। আমি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইছিনা।’