
ঢাকা : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধসে পড়েছে। নির্বাচন কমিশনকে মনে হচ্ছে অসহায় ও দুর্বল। নির্বাচনের নামে দেশে খুনোখুনি হচ্ছে। কোনভাবেই নির্বাচন কমিশন এই ব্যার্থতার দায় এড়াতে পারে না।
দেশের এক ভাগ মানুষও যদি বলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি তা আমলে নিতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন ভোটের ফলাফল প্রকাশ করবে না। পুনরায় নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে নির্বাচন কমিশন। আর যদি তাও না পারে তাহলে নির্বাচন কমিশনকে সরে দাঁড়ানো উচিত। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে পরপর চারবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। আবার বিএনপি বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড শুরু করেছে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে এর ধারাবাহিতকা রক্ষা করেছে। আর নির্বাচনে ভোট ডাকাতিতে কারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তা দেশের মানুষ জানে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ কোনভাবেই অগ্রসর হতে পারবে না।
আজ বিকেলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান-এর বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর এর নবগঠিত আহবায়ক কমিটির সাথে এক মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের একথা বলেন। এসময় মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দ জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, সংবিধানের মূল চার নীতির শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। দেশে গণতন্ত্র নেই তাই মানুষের অধিকার নেই। গণতন্ত্র না থাকলে কোন ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা থাকেনা। সমাজতন্ত্র আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে ত্যাগ করে মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছি। আর সামাজিক ন্যায় বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র নেই কোথাও। জাতীয়তাবাদ হারিয়ে যাচ্ছে, নিজস্বতা নেই কোথাও। বিজাতীয় সংস্কৃতি আগ্রাসণ করছে আমাদের। দেশে শুধু ধর্ম নিরপেক্ষতা আছে। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করে সকল ধর্মের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেই আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা হচ্ছে শোষণ ও বৈষম্যহীন একটি কল্যাণময় সমাজ গড়া। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও আমরা স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। সমাজের সকল স্তরে বৈষম্য। সরকারি দল করলে এক আইন আর সাধারণ মানুষের জন্য অন্য আইন। সরকারি দল না করলে চাকরি ও ব্যবসা করা যায় না। আর শোষণ এখনো বন্ধ হয়নি। স্বাধীনতার আগে শোষণ করে আমাদের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে নেয়া হতো। এখন আমাদের সম্পদ সারা পৃথিবীতে পাচার হচ্ছে। দেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পায়নি পঞ্চাশ বছরেও।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, দেশের মানুষ অসহনীয় কষ্টে আছে। বেকাররত্ব বেড়েছে কয়েক কোটি, মানুষের আয় নেই। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলছে। প্রতিবছর শতশত বেকার পাহাড়, সাগর আর মরুভূমি পাড়ি দিয়ে উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। মৃত্যুঝুকি নিয়ে তারা বিদেশে যেতে চাচ্ছে, অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। শিক্ষিত বেকাররা হকারি করছে, অটোরিক্সা চালাচ্ছে। দেশ তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। মানুষ সংসার চালাতে পারে না, মাত্র দশ টাকার জন্য অসুধ কিনতে পারে না অনেকে। আর কিছু কিছু মানুষের টাকা রাখার জায়গা নেই। তারা নামে-বেনামে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। এমন দেশের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেনি। এমন দেশের জন্য বীর শহীদরা জীবন দেয়নি।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, দেশের মানুষ এমন শাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। দেশের মানুষ জানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে পারবে না। তাই তারা জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে একবুক আশা নিয়ে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে কখনোই দেশে গণতন্ত্র ছিলোনা। তবে, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেশ পরিচালনার সময় দেশের মানুষ অনেক বেশি গণতন্ত্র ও সুশাসন ভোগ করেছে। জাতীয় পার্টির আমলে চাঁদাবাজী, সন্ত্রাস, দলবাজী, টেন্ডারবাজী ছিলোনা। পল্লীবন্ধুর সময়ে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়নি, বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড ছিলো না জাতীয় পার্টির আমলে। দেশের মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে, আমরা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতেই রাজনীতি করছি।
এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে মুক্তি চায়, জাতীয় পার্টি দেশের মানুষকে মুক্তি দেবে। দেশের মানুষ জানে গণতন্ত্র আর সুশাসন দিতে পারে শুধুই জাতীয় পার্টি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ মানুষের মাঝে দিতে পারবে শুধুই জাতীয় পার্টি। তাই জাতীয় পার্টি নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে চলছে। আমরা পল্লীবন্ধুর স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে দেশের মানুষকে মুক্তি দেবো।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর-এর আহŸায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে এবং জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তর-এর সদস্য সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এটিইউ তাজ রহমান, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ ইলিয়াস উদ্দিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সিরাজুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ সেলিম, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মো: সামছুল হক, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোঃ নাসির উদ্দিন সরকার, আনোয়ার হোসেন তোতা, মোঃ আনিস উর রহমান খোকন, কাজী আবুল খায়ের, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সুলতান মাহমুদ, এমএ রাজ্জাক খান, মাসুদুর রহমান মাসুম, যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হক নুরু, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান নাঈম, মামুনুর রহমান