প্রতারণা ও জালিয়াতি মামলায় সাবরিনার বিচার কাজ শেষের পথে

Friday, January 14th, 2022

ঢাকা: করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা ও রিপোর্ট জালিয়াতির মামলায় বিচার চলছে ডা. সাবরিনা চৌধুরীর।

করোনার নমুনা পরীক্ষা কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত ডা. সাবরিনার মামলায় আর সাত-আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি আছে। এগুলো শেষ হলে এ বছরের প্রথমার্ধেই মামলাটির রায় ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা ও রিপোর্ট জালিয়াতির মামলায় ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হতে চলেছে।

গত ২০ ডিসেম্বর সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদ ও সিআইডির পরিদর্শক রবিউল ইসলাম সাক্ষ্য দেন।

এরপর আদালত ২৭ ডিসেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ঠিক করেন। ওই দিন আদালতে কোনো সাক্ষী না আসায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেন ডা. সাবরিনা ও তার স্বামীর প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথকেয়ার। এর বেশির ভাগই ভুয়া বলে ধরা পড়ে।

এ অভিযোগে গত বছরের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট এ মামলায় ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ডিবির পরিদর্শক লিয়াকত আলী। গত বছরের ২০ আগস্ট সাবরিনাসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।

অভিযোগপত্রভুক্ত অপর আসামিরা হলেন ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফুল চৌধুরী, সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী, জেকেজি হেলথকেয়ারের নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইন্সেসের স্বত্বাধিকারী জেবুন্নেছা রিমা ও বিপ্লব দাস। তারা সবাই কারাগারে।

এর আগে মামলাটি মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালত থেকে অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়।

বিচার শেষ করে বছরের শুরুর দিকেই আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করতে পারবে বলে আশাবাদী রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হওয়ার পর আবার আদালত মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছে। এক বছর করোনার জন্য মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত ছিল।

এ ছাড়া বিচারিক আদালত বদলি হওয়ায় শুনানিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত বিচারক তাদের কোর্টের কাজ শেষে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এ জন্য আদালতে এলেও অনেক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারেননি।

আজাদ রহমান বলেন, ‘নরমালি এসব কোর্টে দুই মাস পরপর সাক্ষীর জন্য তারিখ ধার্য হয়, তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২০ থেকে ২৫ দিন পরপর তারিখ ধার্য করা হয়েছে, তবে মামলাটিতে আরও সাত থেকে আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করার পর মূল সাক্ষীরা কেউ আর বাদ থাকবে না। সব মিলিয়ে এ বছরের প্রথমার্ধের দিকে মামলাটি রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।’

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৬ ও ৪৭১ ধারায় মামলা হয়েছে, যার সর্বোচ্চ সাজা সাত বছরের কারাদণ্ড। একই সঙ্গে জরিমানার বিধান আছে।

অপরদিকে একই আইনের ৪০৬ ধারায় ৩ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা, ১৭০ ধারায় ২ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা, ২৬৯ ধারায় ৬ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান থাকলেও ঠিক কত টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে, সে বিষয়ে দণ্ডবিধিতে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।

এ বিষয়ে সাবরিনার আইনজীবী প্রণব কান্তি ভৌমিক বলেন, ‘মামলাটিতে এখন পর্যন্ত যে ২০ জন সাক্ষ‌্য দিয়েছেন এবং ১ জন আংশিক জবানবন্দি দিয়েছেন, তারা কেউই সাবরিনার নাম বলেননি। সাবরিনা এ মামলার মূল আসামি নন। এ ছাড়া সব আসামিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’

২০২০ সালের ২০ আগস্ট সাবরিনাসহ ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত। মামলাটির অভিযোগপত্রে নাম থাকা ৪২ জন সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। এ ছাড়া আরও একজনের আংশিক সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে পরবর্তী সময়ে তারিখ ঠিক করা হয়েছে ২৫ জানুয়ারি।

সাবরিনার দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র সক্রিয় রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি টের পাওয়ার পর বিস্তারিত জানতে ইসির কাছে তথ্য চেয়েছে। তাতে দেখা যায়, সাবরিনা ২০১৬ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় দ্বিতীয়বার ভোটার হন।

তিনি প্রথমে ভোটার হন সাবরীনা শারমিন হোসেন নামে। একটিতে জন্মতারিখ দেয়া ১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর। অন্যটিতে ১৯৮৩ সালের ২ ডিসেম্বর।

প্রথমটিতে স্বামীর নাম হিসেবে ব্যবহার করেছেন আর এইচ হক। আর দ্বিতীয়টিতে স্বামীর নাম লেখা হয়েছে আরিফুল চৌধুরী। বর্তমানে এ মামলাটি তদন্তাধীন।