সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী লুটে নিল এবি ব্যাংকের ১০৪ কোটি টাকা

Monday, June 27th, 2022

চট্টগ্রাম : এবি ব্যাংকের চট্টগ্রাম ইপিজেড শাখা ২০১৫ সালে ইউরোকারস হোল্ডিং পিটিই লিমিটেডকে ঋণ সুবিধা দেয়। এর পরের বছর ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটিকে দেয়া ঋণ সুবিধাকে অর্থ পাচার বলে অভিযোগ তোলে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত খেলাপি তালিকায় প্রতিষ্ঠানটির নাম উঠে আসে। খেলাপি তালিকা প্রকাশের তিন বছর পর এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চলতি বছর চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবি ব্যাংক লিমিটেডের অফশোর ব্যাংকিংয়ের আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে। অফশোর ইউনিট থেকে চার বিদেশি কোম্পানির নামে চার কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৩৪০ কোটি টাকা) বের করে নেয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ পরিদর্শনে বের হয়ে আসে। বিদেশি কোম্পানিগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের গ্লোবাল এমই জেনারেল ট্রেডিং ও সেমাট সিটি জেনারেল ট্রেডিং, সিঙ্গাপুরের এটিজেড

কমিউনিকেশনস পিটিই লিমিটেড ও ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেড, যেখানে সেমাট সিটি জেনারেল ট্রেডিংয়ের নামেই ১৮৪ কোটি টাকা পাচার হয়। অপরদিকে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত ৩০০ ঋণ খেলাপির তালিকায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ছিল ২৪০। তখন প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৮ কোটি টাকা।

এবি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে এবি ব্যাংক লিমিটেডের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেডের ঋণ সুবিধা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় সিঙ্গাপুরের জারোং ওয়েস্ট স্ট্রিডের রাফেলস প্লেস এসএলটির লিয়েন বান চেং এ ঋণ নেয়ার কয়েক বছর পর খেলাপি হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ ঋণ সুদাসলে মোট খেলাপি পাওনা ১০৪ কোটি ৩৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৮ টাকা হয়েছে। এ খেলাপি পাওনা আদায়ে চলতি বছর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। মামলা নং-১৪/২০২২, যার বিচারিক কার্যক্রম চলমান।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন অর্থপাচারের অভিযোগে এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিট থেকে এই চার বিদেশি কোম্পানির নামে চার কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ডলারের বিষয়ে (বাংলাদেশি টাকায় ৩৪০ কোটি টাকা) তৎকালীন চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৫ সালের দিকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজেই ঋণ দেয়া হচ্ছিল। যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নিচ্ছিল তাদের অস্তিত্ব আছে কি না, তা দেখার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ কারণে বাংলাদেশিরাই কাগুজে কোম্পানি তৈরি করে ঋণসুবিধা নিচ্ছেন। অর্থ লোপাটের নতুন পন্থা হিসেবে অফশোর ব্যাংকিংকে বেছে নেয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে অবশ্যই ব্যাংকের লোকজন জড়িত আছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য এবি ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মাহতাবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, অফশোর ইউনিটে খেলাপি ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেডের বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। আমি চট্টগ্রামের প্রশাসনিক বিষয়গুলো দেখি। ঋণের বিষয় ঢাকা থেকে দেখে। এ বিষয়ে ইপিজেট শাখার কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন। আপনি স্বরূপ কুমার সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। পরে স্বরূপ কুমার সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, আমি এখন অবসরে আছি। এ বিষয়ে আমি জানি না। পরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, কিছু দুর্নীতিবাজ লোকের যোগসাজশে ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই

লিমিটেডের নামে অর্থ পাচার করা হয়, যা দীর্ঘদিন গোপন রাখা হয়, যা এখন আলোচনায় আসছে। এটিসহ আরও কয়েকটি ঋণ জালিয়াতি টাকার অঙ্কে দেশে ব্যাংক খাতে এর আগে আরও বড় ধরনের জালিয়াতি হলেও অফশোর ব্যাংকিং

ইউনিটে এটাই বড় ঘটনা। অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের অভ্যন্তরে পৃথক ব্যাংকিং। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান ও বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে। আর স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে। ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতিমালা অফশোর ব্যাংকিংয়ে প্রয়োগ হয় না। কেবল মুনাফা ও লোকসানের হিসাব যোগ হয় ব্যাংকের মূল হিসাবে।