
ঢাকা: পবিত্র মাহে রমজানে রেস্তোরা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সংকটে পড়েন। তাই এ মাসে সুষ্ঠুভাবে রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাবগুলো জানানো হয়েছে। আসন্ন রমজান মাসকে ঘিরে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
এ সময় বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান জানান, রেস্তোরা ব্যবসায়ীদের নানাবিধ সমস্যা ও সংকট পবিত্র মাহে রমজানে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে থাকে। তাই এ মাসে সুষ্ঠুভাবে রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১) সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্টে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। হাইকোর্টের অনেক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অযাচিতভাবে মোবাইল কোর্ট চলছে। আমরা মোবাইল কোর্টের বিরুদ্ধে না, মোবাইল কোর্ট চলুক যৌক্তিকভাবে। জামিন অযোগ্য- কালাকানুন ধারা ও বিধি বাতিল করতে হবে।
২) করোনা মহামারিতে প্রায় ৩০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে। যারা টিকে আছে তারাও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি সরকারের সহযোগিতা জরুরি।
৩) সাম্প্রতিক সময়ে চড়া মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এর মধ্যে বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে রেস্তোরাঁ খাতে। ব্যবসায় টিকে থাকতে আমাদের সামনে খাবারের দাম বৃদ্ধির বিকল্প নেই। অন্যদিকে খাবারের দাম বৃদ্ধি করলে ভোক্তারা রেস্তোরাঁয় খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রেস্তোরাঁ খাতটি বড় সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে ।
৪) সাম্প্রতিক সময়ে রেস্তোরাঁ খাতে কিছু নেতিবাচক প্রচারণায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেই সংকট থেকে উত্তরণে মিডিয়া দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে এবং ভোক্তা সমাজকে অনুরোধ করবো রেস্তোরাঁ সেক্টরের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে মন্তব্য করার জন্য। রেস্তোরাঁ বিষয়ে প্রশাসন এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। রেস্তোরাঁ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইসিটি আইনে মামলা করা হবে।
৫) বর্তমানে এসি ও নন এসি রেস্তোরাঁর ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স হচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে— মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কর্মজীবী, শ্রমজীবী, দিনমজুরদের জন্য নিম্ন ও মাঝারি মানের রেস্তোরাঁর (বাংলা খাবার) ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার হবে সর্বোচ্চ ৩% এবং ট্যাক্সের হার হবে সর্বোচ্চ ০.৫%।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলা খাবারের ক্ষেত্রে ৮২/সি ধারার ৪ নম্বর কলামে বর্ণিত নির্দেশনা পরিবর্তনপূর্বক ফুল অ্যান্ড ফাইনাল এসেসমেন্টের মাধ্যমে ট্যাক্স নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রতি মাসে ভ্যাটের সঙ্গে ০.৫% হিসাবে ট্যাক্স প্রদান করতে চাই। এতে বছর শেষে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার সময়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না।
৬) তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে যে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অর্থাৎ পূর্বের তুলনায় গ্যাস পাচ্ছি মাত্র ৪০ শতাংশ। কিন্তু বিল আসছে দ্বিগুণ। এদিকে এলপি গ্যাসের দাম চড়া। তাই লাকড়ি নিয়ে রান্না করায় রান্নাঘরের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং তা ব্যয় সাপেক্ষও। তাই রেস্তোরাঁ সেক্টরে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া রেস্তোরাঁয় গ্যাস লাইন ট্রান্সফার কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রাখা হয়েছে। অবিলম্বে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে লাইন ট্রান্সফার এবং নাম পরিবর্তনের সব প্রতিবন্ধকতা তুলে নিতে হবে।
৭) প্রতিবছরই মাহে রমজানে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। তারা ইফতারের নামে ইফতারি পসরা সাজিয়ে বসে। এদের হাইজেনিক/নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই। এই বিষয়ে নজর দেওয়া অতীব জরুরি।
৮) রমজানে ইফতারি ও সেহরি সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার সুযোগ প্রদান করতে হবে।
এছাড়াও রমজানে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি, রমজানে রেস্তোরাঁর ন্যায্য মূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি, বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণা এবং সরকারি সংস্থার অভিযানের নামে হয়রানি করা হয় বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান জানান, প্রত্যেকটি অধিদপ্তর বিক্ষিপ্তভাবে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ/ক্ষোভ ঝাড়ছে রেস্তোরাঁ মালিকদের ওপর। পান থেকে চুন খসলেই বিশাল কোনো বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞা লোক ছাড়াই যে যেভাবে পারছে জরিমানার নামে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের ব্যবসার সুনাম নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতিসাধন করছে। এভাবে নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আমরা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিলাম। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা অনুরোধ করেছিলাম যে, আমাদের সেক্টরের ৯৫ শতাংশ কর্মী অদক্ষ ও স্বল্প-শিক্ষিত। তাদেরকে আগে ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসেন এবং আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে আমাদেরকে একটি মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর/সংস্থার অধীনে নিয়ে আসেন। আমাদেরকে একটি গ্রহণযোগ্য এসওপি প্রদান করেন, যার গাইডলাইনে আমরা চলতে পারব। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সংস্থাই আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট কোনো এসওপি দেয়নি।
তিনি আরও জানান, ঢাকা মহানগরের দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তাদের টিম দিয়ে আমাদের পরিচালনার/মনিটরিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যেখানে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও আইসিডিডিআর,বি’কে যুক্ত করেছেন। কিন্তু প্রধান স্টেক হোল্ডার হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতিকে যুক্ত করা হয়নি। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কোনোদিনই সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে আমরা ভয় পাচ্ছি, প্রতিবারের মতো এবারও রমজানে আমাদের ওপর বিশাল খড়গ নেমে আসবে। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।