অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি : জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা

Friday, April 7th, 2023

মুফতিজুল কবীর

বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, আর রাজধানী বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ৭ম। তাই এই অব্যবস্হাপনার শহরে যেকোন দূর্ঘটনা আমাদের জন্য অভিশাপরুপে আবির্ভূত হয়। নানা ধরণের প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের মধ্যে আমাদের রাজধানীতে সবচাইতে বেশি যে বিপর্যয়ের সাথে আমরা পরিচিত তা হচ্ছে অগ্নি দূর্ঘটনা। প্রতিবছর ছোটখাটো অসংখ্য অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও আমরা সচেতন হই না। বড় কোন অগ্নিকাণ্ড ঘটলেই কেবল যেন আমাদের নাড়া দেয়! তখন আমরা নিজেদের সকল দোষ ঢাকতে শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিসকেই কাঠগড়ায় দাড় করাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে এর প্রকৃত দায় কার? অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কি? এত ভয়াবহতার কারণ কি? এসকল প্রশ্ন কখনো না করে ফায়ার সার্ভিসের দিকে সকলে আঙ্গুল তুলে দায় সাড়তে চায়। অথচ শতবছরের প্রাচীন শহরের নেই পরিকল্পনা মাফিক অবকাঠামো। ভূমিদস্যুরা জলাশয় ভরাট করে গড়ে তুলেছে অট্টালিকা। আবাসিক এলাকাতে প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে পরিচালনা করছে ব্যাবসা বাণিজ্য। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না রাজউকের দেওয়া নিয়মনীতি। এই অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, অপ্রতুল জলাশয়ের কারণে তাই যেকোন অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের সামনে আর কোন পথ খোলা থাকে না। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়নের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। অগ্নি সংবাদ পৌছানোর ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে ফায়ার এলার্ম বাজিয়ে গাড়ি হাঁকানো হলেও যানযটের কারণে দূর্ঘটনা কবলিত জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অগ্নিবীরদের অদম্য সাহস ও প্রাণান্তর চেষ্টা থাকলেও অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে তা যথেষ্ট কার্যকর হয় না।

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দশ বছরে ১৭৪০১৩টি অগ্নি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে দেড় হাজারের বেশি এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৯ হাজার জন। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ সালে সারা দেশে ১৪ হাজার ৬৮২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৭১ জন নিহত ও ৭৯৪ জন আহত হন। ২০১১ সালে ১৫ হাজার ৮১৫টি দুর্ঘটনায় ৩৬৫ জন নিহত ও ১ হাজার ৪৭৯ জন আহত হন। ২০১৮ সালের ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ৭ হাজার ৮২৫টি অগ্নিকাণ্ডই ঘটেছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। অর্থাৎ বছরভিত্তিক দূর্ঘটনার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায় এই শহর যত পুরোনো হচ্ছে তত দূর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে।

করণীয় কি?

√ শহরের জলাশয়গুলো উদ্ধার করে সংস্কার করা।
√ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের নীতি অনুসরণ করা। যেমন গাড়ি ঢোকার মত সুপ্রশস্ত রাস্তা রাখা, ভবনে ফায়ার এলার্মের ব্যবস্হা রাখা, স্মোক ডিটেক্টর রাখা, হোজরিল রাখা, জনবহুলতা বিবেচনা করে ফায়ার এক্সিটের ব্যবস্হা রাখা
√ ভবনগুলো’তে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় ফায়ার ইকুইপমেন্ট আছে কিনা তা দায়িত্বরত কর্তাব্যাক্তিদের নিয়মমাফিক তদারকি করা
√ ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিকায়ন করা।

প্রতিটি দূর্ঘটনা থেকেই আমরা প্রত্যেকে শুধুই হারাই। যার পুড়ে যায় সে হারায় স্বপ্ন, জাতি হিসেবে আমরা হারাই স্বনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাবার সাহস। তাই আসুন সচেতন হই, লোভকে সংবরণ করে নিয়ম মেনে চলি; সকলের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাই সফলতার দ্বারপ্রান্তে।