
স্পোর্টস ডেস্ক: আইপিএলের ষোড়শ আসরের কোয়ালিফায়ার পর্বের প্রথম ম্যাচে আজ মুখোমুখি হয় গুজরাট টাইটান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। চেন্নাইয়ের এম এ চিন্নাসোয়ামি স্টেডিয়ামে টস জিতে রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের অর্ধশতকে ১৭২ রানের বড় সংগ্রহ পায় সুপার কিংস। ১৭৩রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চেন্নাই বোলারদের ধারাবাহিক বোলিং তোপে ১৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় হার্দিক পান্ডিয়ার দল। ফলে ১৫ রানের জয়ে দশমবারের মতো আইপিএলের ফাইনাল নিশ্চিত করে মাহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই।
চিপকে টসে জিতে সুপার কিংসকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় গুজরাটের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া।
আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেন চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও ডেভন কনওয়ে। তবে রুতুরাজ দলীয় ৮৭ রানে মোহিত শর্মার বলে মিলারের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে ওপেনিং জুটি ভাঙে ধোনিদের। ৪৪ বলে ৬০ রান ফিরে যান রুতুরাজ।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ১ রান করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে শিবম দুবেকে। ফলে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে পরে চেন্নাই। তবে তৃতীয় উইকেটে কনওয়ে ও অজিঙ্কা রাহানে জুটিতে সেই চাপ সামালে ওঠে চেন্নাই। দলীয় ১৩১ রানে রাহানে আউট হলে ভাঙে ৩১ রানের জুটি। এরপর দ্রুত ফেরেন কনওয়েও। তাতে রান সংগ্রহ কমে আসে চেন্নাই শিবিরে।
শেষ দিকে ১৬ বলে ২২ রান করেন রবীন্দ্র জাদেজা এবং ৪ বলে ৯ রান করা মঈন আলীর ক্যামিও ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান সংগ্রহ করে ধোনির দল।
গুজরাটের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি ও মোহিত শর্মা।
১৭৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে হার্দিক পান্ডিয়ার গুজরাট টাইটানস। গুজরাটের দুই ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা ও শুবমান গিল রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারে ৩ রান করার পর দ্বিতীয় ওভারে যোগ করেন আরও ৬ রান। তৃতীয় ওভারে চেন্নাইয়ের বোলার দীপক চাহারের উপর চড়াও হন গিল ও সাহা। কিন্তু ওভারের শেষ বলে ক্যাচ তুলে দেন ঋদ্ধিমান সাহা। চেন্নাইয়ের ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার পাথিরানার মুঠোবন্দি হয়ে দলীয় ২২ রানেই ফিরে যান গুজরাটের এই ওপেনার। এরপর ব্যাট হাতে মাঠে নামেন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া।
ব্যাট করতে নেমে নিজের খেলা প্রথম বলেই চার মেরে রানের খাতা খোলেন অধিনায়ক পান্ডিয়া। কিন্তু বড় ম্যাচে ব্যাট হাতে খুব একটা অবদান রাখতে পারেননি এই ভারতীয় অলরাউন্ডার। ষষ্ঠ ওভারে মাহীশ থিকসানার করা পঞ্চম বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে নিজের জাতীয় দলের সতীর্থ রবীন্দ্র জাদেজার মুঠোবন্দী হন তিনি। ৭ বল খেলে এক চারে ৮ রান করে ফিরে যান গুজরাট অধিনায়ক।
গুজরাটের হয়ে এরপর ব্যাটিং এ নামেন দাসুন শানাকা। দলীয় ৪১ রানে দুই উইকেট হারানোয় গুজরাট যখন বিপাকে তখন প্রায় একাই দলটির রানের চানা সচল রাখেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ওপেনার গিল। নিয়মিত চার ছয়ে রান তুলতে থাকেন তিনি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে শানাকাকে সাথে নিয়ে ২৮ বলে ৩১ রান যোগ করেন তিনি।
কিন্তু দলীয় ৭২ রানে জাদেজার বলে ক্যাচ তুলে আউট হন শানাকা। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় গুজরাটের। পাঁচে ব্যাট করতে নামা মিলারের পর দলীয় ৮৮ রানে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার গিল, চারটি চার ও একটি ছয়ে ৩৮ বলে ৪২ রান করে ফিরে যান তিনি।
৮৮ রানে পাঁচ উইকেট হারানো গুজরাটের তখন প্রয়োজন ৪৮ বলে ৭৫ রান। ক্রিজে তখন ব্যাটিং করছেন দুই নতুন ব্যাটার বিজয় শঙ্কর ও রাহুল টেওয়াটিয়া। দেখেশুনে খেলতে শুরু করলেও বেশি দূর এগোতে পারেননি এ দুই ব্যাটার। স্কোরকার্ডে মাত্র দশ রান যোগ করতেই থিকশানার শিকারে পরিণত হন টেওয়াটিয়া। এরপর দলীয় ৯৮ রানে সাতে ব্যাট করতে নামেন গুজরাটের আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খান। বল হাতে প্রথম ইনিংসে ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নেয়া এ বোলার আজ ব্যাট হাতে ষোড়শ ওভারে এক চার এক ছয়ে কিছুটা আশা কাগিয়ে তুলেন। গুজরাটের তখন প্রয়োজন ২৪ বলে ৫৮ রান। ১৭ তম ওভারে শঙ্কর ও রশিদ মিলে ১৯ রান তুলে গুজরাটের জয়ের আশা বাড়িয়ে তুলকেও ৯ বলে ১৪ রান করে পরের ওভারেই আউট হয়ে ফিরে যান বিজয় শঙ্কর। ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান করা গুজরাটের তখন প্রয়োজন ১৬ বলে ৩৭ রান। পরের বলেই দৌড়ে রান নিতে গিয়ে চেন্নাইয়ের ফিল্ডার সুভ্রানশু সেনাপতির করা সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে ফিরে যান দর্শন নালকান্দে।
শেষ দুই ওভারে চেন্নাইয়ের তখন প্রয়োজন ৩৫ রান, ১৩ বলে ২৬ রান করে তখনও টিকে আছেন রশিদ খান। কিন্তু তিনিও আর বেশি কিছু করতে পারেননি। এরপর আর মাত্র ৩ বল খেলে ব্যক্তিগত ৩০ রানে তিনিও আউট হয়ে ফিরে যান,চেন্নাই এগিয়ে যায় জয়ের দ্বারপ্রান্তে। শেষ ওভারে গুজরাটের বাকি দুই ব্যাটার আর বেশি কিছু করতে পারেননি। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ইনিংস শেষ হয় ১৫৭ রানে।
এই জয়ে আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দশমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে চেন্নাই সুপার কিংস। আগামী ২৮ মে অনুষ্ঠিত হবে মেগা আসরের ফাইনাল।