
ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে চূড়ান্ত নিবন্ধন পেয়েছে দেশের ৬৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থা। এই সংস্থাগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবে বলে জানিয়েছে ইসি। সেই সঙ্গে পর্যবেক্ষক সংস্থা বাড়াতে নতুন করে আবার আবেদনও আহ্বান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে কমিশন।
তবে চূড়ান্ত নিবন্ধন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগেরই নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা নেই। আবার অনেকেরই নেই তেমন কোনো কার্যক্রম। এমনকি ইসিতে জমা দেওয়া ঠিকানাতে নেই একাধিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব। অন্যদিকে পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন প্রতিষ্ঠানও নিবন্ধন পেয়েছে। যদিও আইন অনুযায়ী তাদের থাকার সুযোগ নেই। ফলে সংসদ নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠান ভোট পর্যবেক্ষণ কতটা সঠিকভাবে করতে পারবে- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের পর যেসব অস্তিত্বহীন ও ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রচার করা হয়েছিল, সেগুলো চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়ায় আস্থা হারাবে ইসি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচন কমিশনের কাজ নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। নতুন দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ফলাও করে সংবাদ প্রচারের পরও দলীয় লোকজন সংস্থা চালাচ্ছেন, অফিস নেই, সাইনবোর্ড ছাড়া কিছু নেই- তারাও নিবন্ধন পাচ্ছে, তালিকাভুক্ত হয়েছে। এতে তো আস্থা কমবে।
আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে চায় ইসি। এর আগে নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন একাধিক কমিশনার। এদিকে, ইসির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৬৬টি সংস্থাকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাদের মেয়াদকাল হচ্ছে ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
পাঁচ বছরের জন্য ইসির নিবন্ধন পেয়েছে ৬৬ পর্যবেক্ষক সংস্থা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধু যশোর জেলায় ডিপিসহ আটটি প্রতিষ্ঠান আছে পর্যবেক্ষকের তালিকায়। আবার হিউম্যান রাইটস ভয়েস নামের প্রতিষ্ঠানের প্রধান এ কে এম নুরুল আমিন জেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। অন্যদিকে রাজশাহীর স্বাস্থ্য শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশনের (সেফ) নাম প্রতিষ্ঠানের প্রধান রুপন কুমার দত্ত রাজশাহী মহানগর তাঁতী লীগের সিনিয়র সভাপতি।
এছাড়াও তালিকায় থাকা হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশের নামের প্রতিষ্ঠানটির মোহাম্মদপুরের ঠিকানায় গিয়ে অফিসের বদলে ‘যানজাবিল ফুড’ নামে খাবারের দোকান মিলেছে। এমন আরও প্রতিষ্ঠান আছে যারা একদমই অখ্যাত।
তবে নতুন তালিকায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’ ও ‘সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন’ নামের দুটি পর্যবেক্ষক সংস্থা। নতুন করে আবেদন চাওয়ার সুযোগ থাকায় এই সংস্থা দুটি সরকারের আনুকুল্যের কারণে তখন টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৯৯টি ও পরে ১১টি অর্থাৎ মোট ২১০টি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষক হওয়ার আবেদন জানায়। এরমধ্যে গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে আপত্তি আহ্বান করে সংস্থাটি।
যদিও প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা ৬৮টি বেসরকারি সংস্থার মধ্য রূপনগর শিক্ষা স্বাস্থ্য সহায়তা ফাউন্ডেশন রিহাফ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসির চূড়ান্ত নিবন্ধন পেতে বঞ্চিত হয়েছে। তবে তাদের কিছু শর্ত দিয়েছে ইসি। সেটা পূরণ করলে তাদেরও নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। সবশেষ ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। ওই সংস্থাগুলোর পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
ইসির নিবন্ধন পাওয়া ৬৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো হলো- মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (মওসুস), সেবা সোশ্যাল ফাউন্ডেশন, অগ্রদূত সংস্থা (এএস), অ্যাক্টিভিটি ফর রিফরমেশন অব বেসিক নিডস (আরবান), হাইলাইট ফাউন্ডেশন, মুভ ফাউন্ডেশন, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, জানিপপ-জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ, ডিসঅ্যাবিলিটি ইনকুজিশন অ্যাক্টিভিটিস (দিয়া), আজমপুর শ্রমজীবী উন্নয়ন সংস্থা (আসাস), আব্দুল মোমেন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, এসডাপ, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন, লুৎফর রহমান ভূঁইয়া ফাউন্ডেশন (এলআরবি), সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, যুব উন্নয়ন সংস্থা, শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র (এসপিবিকে), বঞ্চিতা সমাজ কল্যাণ সংস্থা, কেরানীগঞ্জ হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, এস কে কল্যাণী ফাউন্ডেশন, সোসাইটি ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট অব রুর্যাল পিপল (সার্প), সেতু রুর্যাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এসআরডিএস), সোসাইটি ফর ট্রেনিং অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন (স্টার), রুর্যাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট (রাসা), ডেভেলপমেন্ট হেল্পিং কি (ডিএইচকে), তালতলা যুব উন্নয়ন সংগঠন (টাইডা), স্বাস্থ্য শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশন (সেফ), বাঁচতে শেখা, ডপস ফাউন্ডেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি), ভলান্টারি অর্গানাইজেশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (ভোসড), ক্রিয়েটিভ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি), জেন্ডার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সোসাইটি (জেমস)।
অন্য সংস্থাগুলো হলো- ডেপ (ডেভেলপমেন্ট এডুকেশন অ্যান্ড পিস), বেসিক হিউম্যান রাইটস ভয়েস, সমাজ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এসপিকে), রাজবাড়ী উন্নয়ন সংস্থা (রাস), ডেভেলপমেন্ট পার্টনার (ডিপি), গরীব উন্নয়ন সংস্থা (জিইউকে), সমাহার-মাল্টি ডিসিপ্লিনারি রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (সাস), হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি ফর বাংলাদেশ, ডেভেলপমেন্ট অব মহিলা সোসাইটি (ডিএমএস), সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডিও), সোশ্যাল ইকুয়ালিটি ফর ইফেক্টিভ ডেভেলপমেন্ট (সীড), ইন্টিগ্রেটেড সোসাইটি ফর রেইজ অব হোপ (রিশ), সমন্বিত নারী উন্নয়ন সংস্থা (এস.এস.ইউ.এস), পল্লী একতা উন্নয়ন সংস্থা (রুডো), শিল্ড-সোসাইটি ফর হিউম্যান ইম্প্রুভমেন্ট অ্যান্ড লাস্টিং ডেভেলপমেন্ট, সেঁজুতি হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সিডফ), এসো জাতি গড়ি (এজাগ), ওয়াসভা, সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (সাকো), ফোরাম ফোর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এফএফডিএ), প্রকাশ গণকেন্দ্র, রুর্যাল অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (রাউডো), সার্ভিসেস ফর ইকুইটি অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (সীড), তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, হিউম্যান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি-হিডস, রুর্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি ফর বাংলাদেশ, গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক), ইকো-কনসার্ন অ্যাসোসিয়েশন, গণউন্নয়ন কেন্দ্র এবং এসো বাঁচতে শিখি (এবাস)।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরও পর্যবেক্ষক নিতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন আহ্বান করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম ধাপে নিবন্ধন না পাওয়া পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোও চাইলে ইসির নিবন্ধনের জন্য আবারও আবেদন করতে পারবে।