নূরলদীন আবার ডাকছে, তরুণরা সবাই জেগে উঠুন: ফখরুল

Saturday, September 16th, 2023

রংপুর : কৃষক নেতা নূরলদীন সেদিন রংপুর থেকে ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই’ ডাক দিয়েছিল, আজ তরুণ সমাজ সেই রংপুর থেকে লুটেরা-ফ্যাসিবাদকে রুখে দেওয়ার ডাক দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘এই রংপুরের একটা বিরাট ঐতিহ্য আছে। সেই ঐতিহ্য হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। ব্রিটিশ আমলে রংপুর নূরলদীন ছিলেন একজন কৃষক নেতা নূরউদ্দীন মোহাম্মদ বাকের জং। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সেদিন নূরলদীন ডাক দিয়েছিলেন, জাগো বাহে কোনঠে সবাই।’

আজ তরুণরা বাংলাদেশের মানুষকে ডাক দিচ্ছে- এই ভয়াবহ একনায়কতন্ত্র স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদ, লুটেরা-তাদের বিরুদ্ধে রুখে নূরলদীনের এই রংপুর থেকে রুখে দাঁড়াবার ডাক আসছে।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রংপুরে তারণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করতে গিয়ে এ সব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘এই রোডমার্চ শুরু হল, যেদিন এই সরকারের পতন হবে সেদিন শেষ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি পরিষ্কার পদত্যাগ করেন, আপনাকে দেশের মানুষ আর দেখতে চায় না। আপনি সংসদ বিলুপ্ত করেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। জনগণ অংশগ্রহণ করবে, যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করবে, নতুন বাংলাদেশ গঠন করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচনের পরে ৩১ দফার ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।’ উপস্থিত নেতাকর্মীদের দেখিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচিতে আজ লাখ লাখ মানুষ অংশ নিচ্ছে। এই জনগণের উত্তাল তরঙ্গে এই সরকার ভেসে যাবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’

বেলা সোয়া ১১টায় এই রোডমার্চ রংপুর থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এই রোডমার্চের নেতৃত্বে রয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সাথে রয়েছেন আয়োজক তিন সংগঠনের শীর্ষ ছয় নেতা। তারা হলেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান এবং ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। এই রোডমার্চে পথে পথে অংশ নিচ্ছে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

এই রোডমার্চের উদ্বোধন করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়ে তাদের নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চাল, ডাল, লবণ, তেল, বিদ্যুতের দামসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিদ্যুৎও পায় না। দুর্নীতি করে সব কিছু বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। দেখবেন, রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। রিজার্ভ তো তারা চুরি করছে। অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই তরুণরা বাংলাদেশের সবচেয়ে সূর্য সন্তান, তাদের চাকরি নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গেলে বিএনপির নাম-গন্ধ থাকলেও সেটা করতে পারে না।’

এ সময় গত একমাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাতেও হাসপাতালে গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। সেখানে চিকিৎসকরা সবাই (মেডিকেল বোর্ড) এসছিলেন। তারা খুব চিন্তিত; দেশনেত্রী বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই সরকারের কাছে তার পরিবার থেকে এবং আমরা বলছি, তাকে বিদেশে চিকিৎসা করার জন্য। কিন্তু সরকার তা শুনছে না। অথচ, তারা নিজেরা, তাদের চিকিৎসার জন্য বারবার বিদেশে যায়।’

তিনি বলেন, ‘১/১১-তে এই প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) তখন বন্দি ছিলেন। প্যারোলে তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। সেই তিনিই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন না।’

গত ১৫ বছরে এই সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যাকে আমরা গণতন্ত্রের মাতা বলি। যে মহীয়সী নেত্রী, তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে সাজা দিয়ে কারান্তরীন করা হয়েছিল। এখন তিনি গৃহবন্দি। অথচ, দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।’ তাদের জামিন দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।