
ঢাকা : নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটাতে মরণ খেলায় মেতে উঠেছে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, সুষ্ঠু ভোটে বিশ্বাসী তাদের নিয়ে জাতীয়তাবাদী সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী দিনের রাজপথে ব্যারিকেড তৈরি করে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। এবার গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ জেগে উঠেছে। তারা রাস্তায় নেমেছে। সকল পেটোয়াকে রুখে দিবে।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ভাষা সৈনিক মরহুম শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
শেখ হাসিনার টার্গেট এখন উপরের দিকে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যেভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে নিপীড়ন নির্যাতন করা হয়েছে শেখ হাসিনা এখন একই কায়দায় বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে নিপীড়ন নির্যাতন করছে। কারাগারে বিনাচিকিৎসায় বহু নেতাকর্মী মৃত্যবরণ করেছে। এখন অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনাচিকিৎসায় মূত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের কথা বললে পরে আওয়ামী লীগ রিয়্যাক্ট করে। শেখ হাসিনা গুম করলে সেটা ঠিক, খুন করলে সেটা ঠিক। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রতিবাদ করলে সরকার প্রচন্ড রেগে যায়। সুষ্ঠু নির্বাচন আওয়ামী লীগের চরম শত্রু। সুস্থ ইনক্লুসিভ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রীর চরম শত্রু।
রিজভী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য আওয়ামী লীগের লোকাল থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চেয়েও নিম্নমানের। তারা যখন বলে নির্বাচন নিয়ে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এইটা তো রাজনীতিবিদদের চেয়েও খারাপ বক্তব্য। দেশে কি নির্বাচন আছে? একজন ডিআইজি কিভাবে এসব বলতে পারে? শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তারা এসব কথা বলছেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আমাদের কীর্তিমান মানুষদের একজন। কিন্তু আমরা তাদের মনে রাখি না। অথচ এসব মানুষ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। ছাত্র আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাণ পুরুষ। তাকে আমাদের বেশি বেশি মনে করতে হবে। এইভাবে মওদুদ আহমদ, সালাম তালুকদার, কেএম ওবায়দুর রহমান তাদেরও মনে রাখতে হবে।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সব গুনী মানুষকে আক্রমণ করছে। ব্যারিস্টার রফিক উল হককে আক্রমণ করেছিলেন। এখন ড. ইউনূসকে আক্রমণ করছেন। তিনি দেশের ছেলে, নোবেল পুরস্কার পেয়ে দেশের সম্মান বয়ে এনেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনার মনে কোথায় যেন ঈর্ষা কাজ করছে। অথচ খুনি ডাকাত জুয়ারী ক্যাসিনো ব্যবসায়ীরা তার আশ্রয় প্রশ্রয় পাচ্ছে।
রিজভী বলেন, আজকে এই সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘণ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস হয়। এটা তো প্রধানমন্ত্রী ও আবদুর রাজ্জাকদেরকে জবাব দিতে হবে। আমাদের ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সুমন জাকির কোথায়? এর উত্তর শেখ হাসিনা এবং কৃষিমন্ত্রীকে দিতে হবে।
রিজভী বলেন, আজকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার খুন করলে সেটা ঠিক। কেউ তার বিরুদ্ধে বললেই হয়ে গেলো মানবাধিকার লঙ্ঘণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কেউ বললে তার বিরুদ্ধে শুরু হয় নির্যাতন নিপীড়ন। আজকে আদিলুর রহমান খান শুভ্র একজন ভদ্র লোক ও আইনজীবী। তিনি এই সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন বিধায় তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে একটা জরিপ করতেন। তিনি সাধারণ মানুষের মাঝে জরিপ করে দেখতেন যে, তিনি বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আদিলুর রহমান খানকে যে সাজা দিয়েছেন তা জনগণ সমর্থন করে কি না? আসলে শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের কোনো মানদণ্ড মানেন না। তার মানে হলো, তোরা যে যাই বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ (ক্ষমতা) চাই।
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের দিয়ে দাস শ্রমিক তৈরি করছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা চিকিৎসা পায় না। অনেকেই কারাগারে মারা গেছেন। এবার তার টার্গেট উপরের দিকে। মূলত তিনি নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে চান না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজকে নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করেছে। কই তারা তো একজন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আসলে এরা ক্ষুধার সরকার। দুর্ভিক্ষের সরকার। মানুষ মরলো নাকি বাঁচলো সেদিকে তাদের দৃষ্টি নেই। এই সরকার নীল নকশা করে ক্ষমতায় আছেন। যে কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে এখনও কারান্তরীণ রাখা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন প্রমুখ। সবশেষে মরহুম শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন ওলামা দলের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার।