কালাইয়ে স্যালাইন সংকটে রোগীরা দিশেহারা

Monday, October 2nd, 2023

এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই উপজেলা প্রতিনিধি : চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত জুলাই থেকে স্যালাইনের চাহিদাও বাড়তে শুরু করে।চাহিদার চাপে জয়পুরহাটের কালাইয়ে রোগীদের প্রাণ রক্ষাকারী নরম্যাল স্যালাইনেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।হাসপাতালেও চলছে স্যালাইনের সংকট।অথচ কোনোও দুর্ঘটনা, পেটব্যথা, আমাশয়, রক্তক্ষরণ, উচ্চরক্তচাপ, শারীরিক দুর্বলতা কিংবা অপারেশনের রোগীর জন্য স্যালাইন অত্যন্ত অত্যাবশ্যকীয়।

’চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় প্রতিদিন এমন দুর্ভোগে পড়ছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা।স্যালাইনের খোঁজে গোটা উপজেলার ফার্মেসিগুলো চষে বেড়ালেও কাঙ্ক্ষিত স্যালাইন মিলছে না।যারা পাচ্ছেন তাদের বেশি দাম দিয়ে কিনে নিতে হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে,সরকারিভাবে চাহিদামতো হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।ফলে জীবনরক্ষাকারী এই পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।ভর্তি হলে চিকিৎসা সেবার শুরুতেই বেশির ভাগ রোগীকে ধরন অনুযায়ী ডিএনএস,সিএস,এইচএস,ডিএ ৫%,ডিএ ১০% স্যালাইনগুলো পুশ করা হয়।কলেরা স্যালাইনের তেমন সংকট না থাকলেও অন্যান্য স্যালাইনগুলোর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এই সংকট চলছে।

রোগীদের বাইরে থেকে স্যালাইন আনতে বললে হাসপাতালের স্লিপ দেখলেই ফার্মেসি থেকে‘স্যালাইন নাই’বলে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

জিন্দারপুর ইউনিয়নের রোগীর স্বজন আমজাদ হোসেন বলেন,বিভিন্ন দোকান ঘুরে স্যালাইন বেশি দামে কিনে আনতে হয়।এমনিতেই হাসপাতালে অনেক খরচ, তার মধ্যে স্যালাইন দেয় না আবার বাইরে থেকে বেশি দামে কিনতে‌ হয়।এই স্যালাইন সংকট নিরসন করা খুবই জরুরি প্রয়োজন।

শাওন ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা শাহারুল আলম বলেন, অনেকদিন ধরেই স্যালাইনের সংকট চলছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম রয়েছে স্যালাইনের।কোম্পানির কাছে যে পরিমাণ অর্ডার দেওয়া হয় তা তারা সরবরাহ করতে পারে না।

পৌর সদরের ওষুধ বিক্রেতা ইউনুস আলী বলেন,গত এক মাস থেকে স্যালাইনের খুবই সংকট,রোগীরা চাইলেও দিতে পারছি না।কোম্পানিরা কিছু স্যালাইন দিলেও তা শেষ হয়ে যায়।তাদের কাছে চাইলে তারা বলে সাপ্লাই নেই।তাই যে দু-চারটা স্যালাইন দেয় তা একঘণ্টাও দোকানে থাকে না।দিনভর রোগীর স্বজনরা দোকানে এসে ফেরত যান।’

নিশাদ ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা আবু কালাম বলেন,কোম্পানি স্যালাইন না দিলে আমরা কী করবো!কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলেন যে,সাপ্লাই নাই।কোম্পানিগুলো না দেয়ার কারণে স্যালাইন নেই।কোম্পানিগুলো কী কারণে দিচ্ছে না,বেশিরভাগ দোকানি সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

স্যালাইন না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কালাই উপজেলায় নিযুক্ত ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভরা বলেন,‘উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদামত স্যালাইন সরবরাহ করছে না।১শো স্যালাইন চাওয়া হলে দিচ্ছে মাত্র ০৮ থেকে ১০টি।ডেঙ্গু রোগীর পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখীর পর থেকেই নরমাল স্যালাইনেরও একদম সরবরাহ নেই বললেই চলে।পর্যাপ্ত উৎপাদন না থাকার কারণেই এমন সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিগুলো।’

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা.জুয়েল বলেন, ‘বহুদিন ধরেই নরমাল স্যালাইনের খুবই সংকট চলছ।এমন পরিস্থিতি থাকলে রোগীদের চিকিৎসায় তাদেরকে চরম হিমশিম খেতে হবে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.ফয়সল নাহিদ বলেন,‘স্যালাইনের সংকট চলছে।আমরা হিমশিম খাচ্ছি।যেসব কোম্পানি স্যালাইন বানায়,তারা যদি দেয়,তাহলে সংকট থাকবে না।যে পরিমাণ স্যালাইন তারা দিয়েছে,তার চেয়ে চাহিদা বেশি,বিক্রি বেশি।সে কারণে সংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন,স্যালাইন মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরির কোনো সুযোগ নেই।কেউ যদি করে থাকে,আর তারা যদি ধরা পড়ে,তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।